SATT ACADEMY

New to Satt Academy? Create an account


or

Log in with Google Account

Admission
বাংলা সাহিত্য - কবিতা - আমি কোনো আগন্তুক নই

আসমানের তারা সাক্ষী

সাক্ষী এই জমিনের ফুল, এই

নিশিরাইত বাঁশবাগান বিস্তর জোনাকি সাক্ষী

সাক্ষী এই জারুল জামরুল, সাক্ষী

পুবের পুকুর, তার ঝাকড়া ডুমুরের ডালে স্থির দৃষ্টি

মাছরাঙা আমাকে চেনে

আমি কোনো অভ্যাগত নই

খোদার কসম আমি ভিনদেশি পথিক নই

আমি কোনো আগন্তুক নই ।

আমি কোনো আগন্তুক নই, আমি

ছিলাম এখানে, আমি স্বাপ্নিক নিয়মে

এখানেই থাকি আর

এখানে থাকার নাম সর্বত্রই থাকা

সারা দেশে।

আমি কোনো আগন্তুক নই ৷

এই খর রৌদ্র জলজ বাতাস মেঘ ক্লান্ত বিকেলের

পাখিরা আমাকে চেনে

তারা জানে আমি কোনো অনাত্মীয় নই ।

কার্তিকের ধানের মঞ্জরী সাক্ষী

সাক্ষী তার চিরোল পাতার

টলমল শিশির – সাক্ষী জ্যোৎস্নার চাদরে ঢাকা

        নিশিন্দার ছায়া

অকাল বার্ধক্যে নত কদম আলী

তার ক্লান্ত চোখের আঁধার –

আমি চিনি, আমি তার চিরচেনা স্বজন একজন । আমি

জমিলার মা'র

শূন্য খা খা রান্নাঘর শুকনো থালা সব চিনি

সে আমাকে চেনে।

হাত রাখো বৈঠায় লাঙলে, দেখো

আমার হাতের স্পর্শ লেগে আছে কেমন গভীর । দেখো

মাটিতে আমার গন্ধ, আমার শরীরে

লেগে আছে এই স্নিগ্ধ মাটির সুবাস।

আমাকে বিশ্বাস করো, আমি কোনো আগন্তুক নই ।

দু'পাশে ধানের খেত

       সরু পথ

সামনে ধু ধু নদীর কিনার

আমার অস্তিত্বে গাঁথা । আমি এই উধাও নদীর

মুগ্ধ এক অবোধ বালক ৷
 

Content added || updated By

আহসান হাবীব ১৯১৭ সালের ২রা জানুয়ারি পিরোজপুর জেলার শঙ্করপাশা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি বরিশালের ব্রজমোহন কলেজে আইএ পর্যন্ত অধ্যয়ন করেন। কর্মজীবনে তিনি সাংবাদিকতাকে পেশা হিসেবে গ্রহণ করেন। গভীর জীবনবোধ ও আশাবাদ তাঁর কবিতাকে বিশিষ্ট ব্যঞ্জনা দান করেছে। তাঁর কবিতার স্নিগ্ধতা পাঠকচিত্তে এক মধুর আবেশ সৃষ্টি করে। তিনি সামাজিক বৈষম্যের বিরুদ্ধে এবং আর্তমানবতার পক্ষে বক্তব্য রেখেছেন। তাঁর প্রথম কাব্য রাত্রিশেষ। এ ছাড়া ছায়াহরিণ, সারা দুপুর, আশায় বসতি, মেঘ বলে চৈত্রে যাবো তাঁর উল্লেখযোগ্য কাব্য। ছোটোদের জন্য তাঁর কবিতার বই জোছনা রাতের গল্প ও ছুটির দিন দুপুরে। রানী খালের সাঁকো তাঁর কিশোরপাঠ্য উপন্যাস। আহসান হাবীব তাঁর সাহিত্যকর্মের জন্য বাংলা একাডেমি ও একুশে পদক পুরস্কার লাভ করেন। দৈনিক বাংলা পত্রিকার সাহিত্য সম্পাদক থাকাকালে ১৯৮৫ সালের ১০ই জুলাই তাঁর জীবনাবসান ঘটে। 
 

Content added By

 আসমান – আকাশ। সাক্ষী – কোনো কিছু নিজচোখে দেখেছেন এমন কেউ। জমিন- ভূমি।

নিশিরাইত – ‘নিশীথ রাত্রি’র গ্রামীণ কথ্যরূপ (গভীর রাত বোঝাতে)।

অভ্যাগত – গৃহে এসেছে এমন ব্যক্তি, আগন্তুক, নিমন্ত্রিত অতিথি।

ধানের মঞ্জরী – মঞ্জরী হলো মুকুল বা শিষ, ধানের মঞ্জরী হলো ধানের শিষ বা মুকুল।

নিশিন্দা – গ্রামীণ এক ধরনের গাছ।

জমিলার মা'র...সব চিনি - গরিব, অভাবী শ্রেণির প্রতিনিধি জমিলার মা। তাদের রান্নাঘর শূন্যই থাকে সাধারণত। কারণ রান্না সব চিনি করার খাদ্য উপাদান তাদের নেই। যেহেতু রান্না করা হয় না, খাবারও খাওয়া হয়ে ওঠে না। তাই থালা-বাসনও শুকনো থাকে। কবিও সেই অবস্থার কথা জানেন।

স্নিগ্ধ মাটির সুবাস - মাটির মিষ্টি গন্ধ । অর্থাৎ মায়াবী ও আকর্ষণীয় গ্রামবাংলা ।

দু'পাশে ধানের ক্ষেত ... আমার অস্তিত্বে গাঁথা – কবি গ্রামীণ জীবনেই বেড়ে উঠেছেন। গ্রামের মাঠ-ঘাট পথ-প্রান্তরের মতো ক্ষেতের সরু পথ, তার পাশে ধানের সমারোহ এবং একটু এগিয়ে গেলে বিশাল নদীর কিনার কবির মনের ভেতর, অস্থি-মজ্জায় গ্রথিত হয়ে আছে। এরা সবাই কবির খুবই চেনা-জানা ।

Content added || updated By

জন্মভূমির সঙ্গে মানুষের আজীবনের সম্পর্ক। এর সবকিছুই তার মনে হয় কত চেনা, কত জানা। জন্মভূমির মধ্যে শিকড় গেড়ে থেকেই মানুষ তাই সমগ্র দেশকে আপন করে পায়। এই অনুভূতি তুলনাহীন। দেশ মানে তো শুধু চারপাশের প্রকৃতি নয়, একে আপন সত্তায় অনুভব করা। আর দেশকে অনুভব করলেই দেশের মানুষকেও আপন মনে হবে আমাদের। এই কবিতায় বাংলা সাহিত্য
সেই অনুভবই আন্তরিক মমতায় সুন্দরভাবে তুলে ধরেছেন কবি। তিনি উচ্চারণ করছেন, তিনি কোনো আগন্তুক নন । তিনি যেমন ওই আসমান, জমিনের ফুল, জোনাকি, পুকুর, মাছরাঙাকে চেনেন, তেমনি তারাও তাকে চেনে । পাখি, কার্তিকের ধান কিংবা শুধু শিশির নয়, তিনি এই জনপদের মানুষকেও ভালোভাবে চেনেন। তিনি কদম আলী, জমিলার মা'র মতো মানুষের চিরচেনা স্বজন। কবি অনুভব করেন, যে-লাঙল জমিতে ফসল ফলায়, সেই লাঙল আর মাটির গন্ধ লেগে আছে তার হাতে, শরীরে। ধানক্ষেত আর ধু ধু নদীর কিনার, অর্থাৎ এই গ্রামীণ জনপদের সঙ্গেই তার জীবন বাঁধা । এই হচ্ছে তাঁর অস্তিত্ব। এই হচ্ছে মানবজীবন, জন্মভূমির সঙ্গে যে-মানুষ গভীরভাবে সম্পর্কিত ।
 

Content added By